অন্যান্যবিনোদন

সেদিন আমি অনেক কেঁদেছিলাম, এখনো বার্বির সেই ঘটনা ভুলতে পারি না

।। মহাকাল বিনোদন ডেস্ক ।।
শৈশবে বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। মা–ই সব সময় ছায়া দিয়ে আগলে রাখতেন। ২০১৬ সালে হারিয়েছেন সেই মাকেও। কিন্তু প্রিয়জনদের ছেড়ে কি থাকা যায়। প্রতিদিনই নানাভাবে তাঁরা ফিরে আসেন নানা স্মৃতিতে। সেই স্মৃতি কখনো মনটা ভালো করে দেয়, হাসায়, কখনো ভীষণ মন ভার করে দেয়। আবার কখনো বাবা-মা—সোহেল চৌধুরী ও পারভীন সুলতানা দিতির মধ্যেই সান্ত্বনা খুঁজে পান। বলছি এই তারকা দম্পতির কন্যা লামিয়া চৌধুরীর কথা। এবারও কথায় উঠে এল বাবা–মায়ের অজানা অনেক স্মৃতি।

কথার সূত্র হলিউডের সিনেমা ‘বার্বি’ নিয়ে। এ সপ্তাহে সিনেমাটি বিশ্বজুড়ে মুক্তি পেয়েছে। সিনেমাটি নিয়ে দেশে ও বিদেশে তুমুল আলোচনা হচ্ছে। ঘুরেফিরে আসছে ‘বার্বি’র নানা প্রসঙ্গ। দেশের তারকা থেকে শুরু করে অনেকেই নানা সাজে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করছেন। এর মধ্যেই মায়ের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে লামিয়া লিখেছেন, ‘আমার মা ছিলেন সত্যিকারের বার্বি।’
ছবিটি পোস্ট করে লামিয়া লিখেছেন, ‘আমার মা ছিলেন সত্যিকারের বার্বি।’
ছবিটি পোস্ট করে লামিয়া লিখেছেন, ‘আমার মা ছিলেন সত্যিকারের বার্বি।’ছবি: ফেসবুক

লামিয়ার কাছে প্রশ্ন, ‘“বার্বি” সিনেমাটি কি দেখেছেন?’ তিনি উত্তর দেন, ‘না।’ জানান, শিগগির দেখবেন। এবার জানতে চাওয়া—তাহলে যে মায়ের ছবি পোস্ট করে লিখলেন, ‘আমার মা সত্যিকারের বার্বি।’ এবার লামিয়া বলতে থাকেন, ‘আমার আম্মার ওই ছবিটি অনেক সুন্দর লাগছে। যে কারণে পোস্ট করেছি। সব জায়গায় দেখছি, সবাই “বার্বি” সিনেমা দেখতে যাচ্ছে, পিংক কালারের পোশাক পরে অনেক সাজগোজ করছে। সবাই বার্বির মতো সেজে ছবি দিচ্ছে। তখন আমার মনে হলো আম্মার এমন কিছু ছবি আছে যেগুলো অনেক আগের। সেই সময়েই আম্মু যেমন সাজত, যেমন ড্রেস পরত, তখনই আম্মুকে বার্বির লাগত।

নব্বই দশকে দেশের আলোচিত নায়িকাদের মধ্যে একজন ছিলেন চিত্রনায়িকা দিতি। সেই সময় তুমুল ব্যস্ত থাকার পরও মায়ের সেই সাজসজ্জার ছবিগুলো এখনো অবাক করে মেয়েকে। লামিয়া বলেন, ‘মা তো সময়ের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। সেই ছবিগুলোই বলে মা অনেক প্রোগ্রেসিভ ছিল। আমার কাছে মায়ের অনেক ছবি। সেই ছবিতে মায়ের ফ্যাশন একদমই অন্য রকম ছিল।’

লামিয়া আরও বলেন, ‘তখন ইন্টারনেটের যুগ ছিল না। যে কারণে কেউ ছবিগুলো দেখতে পেত না। শুধু সিনেমা হলে গিয়েই দেখা দেখত। এখন সেই ছবি দেখে আমি চিন্তা করি, এত আগে ইন্টারনেট ছাড়া কীভাবে আম্মুর মাথায় এই কম্বিনেশনের আইডিয়া আসত! তিনি এত সুন্দর আউটফিট, চুলের স্টাইল একসঙ্গে ম্যাচ করে পরতেন।’

জানা গেল, দিতি নিজেই তাঁর রূপসজ্জা, চুলের স্টাইলগুলো করতেন। সৃজনশীল কাজে যেমন এই অভিনেত্রীর যত্নের ছাপ থাকত, তেমনি সাজেও সেই সময়ে ভক্ত–সহকর্মীরা দিতির মধ্যে সৃজনশীলতার খোঁজ পেতেন। ‘মেকআপ ম্যান থাকত। কিন্তু আমার আম্মাকে ছোটবেলা থেকেই দেখতাম নিজেই মেকআপ, হেয়ারস্টাইল, কাপড় ডিজাইন করতেন,’ বলেন লামিয়া।

তারকা দম্পতির এই কন্যা এক বছর ধরে অপেক্ষা করছেন ‘বার্বি’ সিনেমাটি দেখার। কারণ, ‘বার্বি’ পুতুল তাঁর ভীষণ পছন্দের। শৈশবে বার্বির অনেক বড় সংগ্রহ ছিল লামিয়ার। এগুলো তাঁর বাবা–মা কিনে দিতেন। যে কারণে ‘বার্বি’ সিনেমাটি নিয়ে অনেক আগ্রহ তাঁর। কিন্তু মিস করছেন বাবাকে। কারণ, চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী কিছুদিন পরপরই সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে তাঁদের ঘুরতে নিয়ে যেতেন। সেখান থেকে মেয়ের জন্য বার্বির সব আইটেম কিনে আনতেন। বাসাজুড়ে সেগুলো থাকত। এগুলো নিয়ে বাবার কাচের টেবিলে নিয়মিত খেলতেন তিনি।
লামিয়া চৌধুরী। ছবি: ফেসবুক
লামিয়া চৌধুরী। ছবি: ফেসবুক

লামিয়া বলেন, ‘একবার আমি কোচিংয়ের ক্লাসে গিয়েছি। ফিরে এসে দেখি, আমার দুই বছরের ছোট ভাই দীপ্ত কার্পেটের ওপর বসে আমার সব বার্বি এক লাইনে বসিয়েছে। সবগুলোর চুল কেটে ছোট করে দিচ্ছে। কারণ, তার চুল ছোট ছিল। বাবা পাশেই শুয়ে সব দেখছে কিন্তু ওকে কিছুই বলছে না। ওকে আদর করছে, উৎসাহ দিচ্ছে। এই অবস্থা বাসায় এসে দেখে আমি চিৎকার দিয়েছি। মনে হয়, আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর দৃশ্য ছিল সেটা। এখন মজা পেলেও তখন ভয়ংকর ট্রমার মধ্যে ছিলাম। সেদিন আমি অনেক কেঁদেছিলাম। সেই ঘটনা এখনো ভুলতে পারি না। সেদিন এমন অবস্থা যে শিশুদের যদি হার্ট অ্যাটাক হতো, তাহলে হয়তো আমার সেদিন হার্ট অ্যাটাক হতো। খুবই খারাপ লেগেছিল। পরে ছোট চুলওয়ালা বার্বি নিয়ে এক বছর ঘুরেছি। এটা নিয়ে ভাইয়ার ওপর রাগ ছিল। এখনো ভাইয়ার বন্ধুদের বলি সে ঘটনা।’

শৈশবের মজার দিনগুলোর কথা বলে হাসির পরই নেমে এল কিছুটা নীরবতা। দিন শেষে মা–বাবাহীন একটি মেয়ের পথচলা কতটা কষ্টকর, সেটাই হয়তো ভাবছিলেন। লামিয়া জানান, মায়ের সঙ্গে পছন্দের অনেক কিছুই ভাগাভাগি করতেন। সব ইচ্ছাই মা পূরণ করতেন। তাঁদের মধ্যে সম্পর্কটা ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ। তাদের কথা মনে পড়লে অ্যালবামে রাখা ছবিগুলো দেখেন।
লামিয়া চৌধুরী। ছবি: ফেসবুক

লামিয়া বললেন, ‘এখন সময় কাটানোর জন্য অনেকে পছন্দের “বার্বি” সিনেমা দেখতে যাচ্ছেন। অনেকে গোলাপি পোশাক পরে যাচ্ছেন। এই গোলাপি রং আমার ও মায়ের পছন্দের পোশাক। এখনো আমার সবকিছুর মধ্যেই পিংক থাকে। আম্মা আজ বেঁচে থাকলে একসঙ্গে মা-মেয়ে পিংক পোশাকে সেজে “বার্বি” দেখতে যেতাম। অনেক মজা হতো। ভালো সময় কাটত। বাবা হয়তো যেতেন না। কিন্তু আমি বললে না–ও করতে পারতেন না। তাদের খুবই মিস করছি। বাবা থাকলে জীবনটা অন্য রকম হতো।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button