বাকেরগঞ্জের ৮টি নদীর নাম বাদ দিয়েছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন


admin প্রকাশের সময় : নভেম্বর ১৫, ২০২৩, ৭:২৯ অপরাহ্ন /
বাকেরগঞ্জের ৮টি নদীর নাম বাদ দিয়েছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন

।। নজরুল ইসলাম আলীম ।।
বরিশাল জেলার বৃহত্তর উপজেলা বাকেরগঞ্জ। স্বাধীন বাংলার নবাব আলীবর্দী খানের আমলে বুজুর্গ উমেদপুরের জমিদার ঢাকার আগা বাকের খান এ অঞ্চলে ১৭৪১ খ্রি. নিজ নামে গঞ্জ প্রতিষ্ঠা করেন। তার নাম অনুসারে এ অঞ্চলের নাম রাখা হয় বাকেরগঞ্জ। ১৯৯৩ সালে বরিশাল বিভাগ সৃষ্টির ফলে বাকেরগঞ্জ নামটি জেলা থেকে বাদ দেওয়া হয়। জেলা সদর বরিশালের নামে বিভাগের নামকরণ করা হয়। আগা বাকের খানের স্মৃতি বিজড়িত বাকেরগঞ্জ নামটি বর্তমানে বাকেরগঞ্জ উপজেলাতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।

১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গড়ে ওঠা বাকেরগঞ্জের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ১১টি নদী। বাংলাদেশের নদ-নদীর প্রকৃত সংখ্যা অনুসন্ধান না করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন তাড়াহুড়া করে অসম্পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করেছে। যে তালিকায় উপজেলার ১১ নদী থেকে ৮টি নদীর নাম কমিশনের ‘বাংলাদেশের নদ-নদীর সংজ্ঞা ও সংখ্যা’ বইয়ে তুলাতলি, শ্রীমন্ত, কারখানা, তেঁতুলিয়া, বিষখালী, পায়রা, রাঙ্গাবালিয়া, খয়রাবাদ নদীর নাম মুছে দিয়ে পা-ব নদী, রাঙ্গামাটি নদী,
এবং ধুলিয়া নদীর নাম দেখানো হয়েছে সেই তালিকায়। বাকেরগঞ্জের অংশে পা-ব নদী ১৫ কি.মি. দেখিয়েছেন অথচ প্রকৃতপক্ষে মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ২৪ কিলোমিটার। রাঙ্গামাটি নদী ৬ কি.মি. দেখিয়েছেন অথচ বাকেরগঞ্জের অংশে মোট দৈর্ঘ্য ৯ কিলোমিটার। ধুলিয়ার নদী ৮ কি.মি. দেখিয়েছেন কিন্তু বাকেরগঞ্জের অংশে মোট দৈর্ঘ্য ১১ কিলোমিটার। এছাড়াও পায়রা ও বুড়িশ্বর দুই নদীতে পতন মুখ ৪১ কিলোমিটার দেখিয়েছে যা সঠিক নয়।

এছাড়া গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, নদী দখলদারের তথ্য মুছে ফেলেছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। বাকেরগঞ্জ উপজেলার প্রাণকেন্দ্র থেকে বয়ে যাওয়া তুলাতলী নদী হয়ে পায়রা নদীর সঙ্গে সংযোগ শ্রীমন্ত নদী দখলদারের দখলে থাকলেও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন দখলদারের নাম তাদের প্রকাশিত তালিকায় রাখেনি। সেখানেও শ্রীমন্ত নদীসহ দখলদারদের নাম মুছে দিয়েছে। উপজেলাবাসীর দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের বই ও কমিশনের ওয়েবসাইটের তালিকা থেকে নাম সরিয়ে সংশোধন করে ১১টি নদী তালিকাভুক্ত করাসহ নদী দখলদারদের নাম তালিকাভুক্ত করার।

এ বিষয়ে বাকেরগঞ্জ উপজেলার সর্ববৃহৎ সামাজিক সংগঠন গর্বের বাকেরগঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন মোহন বলেন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশের সর্বশেষ নদীর তালিকা অবিলম্বে বাতিল এবং নতুন করে তালিকা প্রণয়ন করতে হবে। নদী বাকেরগঞ্জের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ। অথচ সুকৌশলে বাকেরগঞ্জের নদী কেন্দ্রিক ইতিহাস মুছে দেওয়ার লক্ষ্যে, বাকেরগঞ্জের নদীর নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে আমরা মনে করি।

এ বিষয়ে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ হওয়া চেয়ারম্যান মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তথ্য নিয়ে অসম্পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করেছি। সেখানে যদি কোনো জেলা উপজেলার নদীর নাম বাদ পড়ে তা বর্তমান যিনি চেয়ারম্যান রয়েছেন তার কাছে লিখিত দিলে সংশোধন করা হবে। এ বিষয়ে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান কামরুন নাহার আহমেদ বলেন, যে নদীগুলোর নাম বাদ পড়েছে তা সংশোধন করা হবে। এবং যে নদীগুলো দখলদারদের দখলে রয়েছে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে