রংপুররাজনীতি

নৌকার পক্ষে গণজোয়ার তুললেন শেখ হাসিনা ।। কী বাহে, একখান ভোট মুই পামু না, একখান ভোট হামাক দেবেন না? ।।

।। মহাকাল ডেস্ক ।।

সিলেটের পর এবার উত্তরাঞ্চলের রংপুরে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার তুললেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার রংপুরের তারাগঞ্জ, পীরগঞ্জ ও মিঠাপুকুরে তিনটি বিশাল নির্বাচনী জনসভায় দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানান? তিনি। বলেন, এই নৌকা স্বাধীনতা এনেছে, অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়েছে, এই নৌকা আমাদের একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ দেবে। ভোটারদের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে সকালে উঠে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

ঢাকা থেকে রংপুর পৌঁছে তিনটি পৃথক জনসভায় ভাষণ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। প্রথমে তারাগঞ্জ ওয়াকফ এস্টেট সরকারি কলেজ মাঠে রংপুর-২ আসনে দলীয় প্রার্থী আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউককে, পরে তার শ্বশুরবাড়ি পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নৌকার প্রার্থী জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে এবং মিঠাপুকুর জায়গীর হাট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জনসভায় দলের প্রার্থী রাশেক রহমানকে পরিচয় করিয়ে দেন শেখ হাসিনা। তিনটি বিশাল নির্বাচনী জনসভায় উপস্থিত লাখ লাখ মানুষকে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে রংপুরের পুত্রবধূ বলেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট দরকার। নূহ নবীর নৌকা মানব জাতিকে মহাপ্লাবন থেকে রক্ষা করেছিল- এ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, এই নৌকা স্বাধীনতা দিয়েছে, অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দিয়েছে। এই নৌকাই উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলেছে। কাজেই আপনাদের কাছে আমার এটাই আবেদন- আমি আপনাদের এলাকার পুত্রবধূ। এ সময় রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায় প্রধানমন্ত্রী দুটি জনসভায় উপস্থিত লাখ লাখ মানুষকে উদ্দেশ্য করে বলেন- ‘কী বাহে, একখান ভোট মুই পামু না, একখান ভোট হামাক দেবেন না?’ প্রধানমন্ত্রী এ সময় সবার ওয়াদা চাইলে উপস্থিত জনতা সমন্বরে দুহাত তুলে এবং কন্ঠে নৌকার গগনবিদারী স্লোগান দিয়ে ভোট দেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল বেলা ১১টায় একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করেন এবং তারপর সড়কপথে কোনো প্রটোকল ছাড়াই পতাকাবিহীন ব্যক্তিগত গাড়িতে এই তিনটি নির্বাচনী জনসভায় যোগ দেন। তারাগঞ্জের জনসভা শেষে পীরগঞ্জে এসে শেখ হাসিনা শ্বশুরবাড়ি ফতেহপুরে তার স্বামী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরমাণু বিজ্ঞানী প্রয়াত ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার কবর জিয়ারত করেন এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। সেখানেই তিনি দুপুরের খাবার খান।
এদিকে, রং-বেরঙের পোশাকে হাজার হাজার মানুষের ঢলে তিনটি নির্বাচনী জনসভায় বিশাল জনসভায় রূপ নেয়। প্রধানমন্ত্রীর রংপুরে আগমন উপলক্ষে প্রতিটি উপজেলা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী নির্বাচনী উৎসবের আমেজে জনসভায় যোগ দিয়ে রংপুরের পুত্রবধুর বক্তব্য শোনেন। সিলেটের মতো রংপুরের এই তিনটি নির্বাচনী জনসভার মঞ্চেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছোটকন্যা শেখ রেহানা। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও নির্বাচনী জনসভাগুলোতে বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য হোসনেয়ারা লুৎফা ডালিয়া, ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, রংপুর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রনি প্রমুখ। এছাড়াও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী, নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, হুইপ ইকবালুর রহীমসহ রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা।

পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক বিশাল নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এই আসনের দলের প্রার্থী জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে নিজের কন্যা আখ্যায়িত করে বলেন, এই যে আমার মেয়েকে আপনাদের দিয়ে গেলাম। নৌক মার্কায় ভোট দিয়ে তাকে জয়যুক্ত করা মানে আমাকে ভোট দেয়া, জয়কে (ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়) ভোট দেয়া, সে জয়ের বোন। পুতুলের (কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল) বোন। তাকে ভোট দেয়া। তিনি সবাইকেই ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ইনশাল্লাহ নৌকা জিতলে তিনি আবারো আসবেন, এখানে জনসভা করবেন এবং বাদবাকি উন্নয়ন কাজগুলোও সম্পন্ন হবে। তারাগঞ্জের নির্বাচনী জনসভায় দলের প্রার্থী আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউককেও তার পুত্রসম উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি তাকে বিজয়ী করতে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। উপস্থিত লাখো মানুষের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আপনাদের (ভোটারদের) সবার কাছে আমার অনুরোধ, এই ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে সব ভোটার দয়া করে সকালে উঠে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে যাবেন।
দিনব্যাপী নির্বাচনী প্রচারে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, নৌকা হচ্ছে নবী হযরত নূহের (আ.) প্রতীক, যা মহাপ্রলয়ের সময় মানবজাতিকে রক্ষা করেছিল। এই নৌকা, যে নৌকায় আপনারা স্বাধীনতা পেয়েছেন এবং আপনাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করেছেন। আপনারা কি নৌকায় ভোট দেবেন?’ আমাকে প্রতিশ্রæতি দিন, আপনারা হাত তুলুন। সমাবেশে উপস্থিত হাজার হাজার নেতাকর্মী, সাধারণ ভোটাররা দুহাত তুলে এবং নৌকার পক্ষে স্লোগান দিয়ে তাদের সমর্থনের কথা জানান। এসব নির্বাচনী জনসভায় গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের বাস্তবায়ন করা অসংখ্য উন্নয়ন কর্মসূচির কথা উল্লেখ করেন তিনি।

আবেগজড়িত কন্ঠে বাবা-মা, ভাইসহ সবাইকে হারানোর ব্যথা-বেদনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমার হারানোর কিছু নেই, পাওয়ারও কিছু নেই। তবে, আপনি যদি ভালো থাকেন, তবেই আপনার জীবন সুন্দর হবে। আমার লক্ষ্য হলো আপনার ( দেশবাসী) সন্তানরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সুন্দর জীবন পাবে। তিনি বলেন, নৌকায় ভোট দিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশের উন্নয়ন হয়। দেশের প্রতিটি জেলার উন্নয়নে কাজ করছে সরকার। দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করাই সরকারের লক্ষ্য। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নৌকা মার্কাই আপনাদের জীবনমান উন্নয়ন করেছে। তাই আরো একবার সুযোগ দেবেন।

উত্তরবঙ্গে মঙ্গা নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তরবঙ্গ থেকে মঙ্গা দূর করা হয়েছে। রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করা হয়েছে। সবাই দুই বেলা খেতে পারবে সে প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলাম। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমরা সেটা করতে পেরেছি। দেশকে আরো উন্নত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এজন্য কেবল নৌকা মার্কা থাকলেই সেটা সম্ভব। আমার আর হারাবার-পাওয়ার কিছু নেই। কিন্তু আপনারা ভালো থাকবেন সেটাই আমার লক্ষ্য। ৭ জানুয়ারি সকালে ঘুম থেকে উঠেই আপনারা ভোট দিতে যাবেন।

সবশেষে মিঠাপুকুরের জায়গার হাট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে রংপুর-৫ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী রাশেক রহমানের বিশাল নির্বাচনী জনসভায় যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে বলেন, দেশের একটি মানুষও ভূমি ও গৃহহীন থাকবে না। প্রত্যেকটা মানুষকে ঘর করে দেব। সেটাই আমাদের সিদ্ধান্ত। সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের দেশ আরো উন্নত ও সমৃদ্ধশালী হবে। আমাদের দেশের মানুষ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে। সেভাবেই আমরা দেশকে গড়ে তুলছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অঞ্চলে ২০১৩, ২০১৪ সালে কীভাবে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে ওই বিএনপি-জামায়াত। একটা সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য তৈরি করেছিল তারা। আমরা কঠোর হাতে সেটা দমন করি। এই অঞ্চলে এখন শন্তি বিরাজমান। সেটা একটাই কারণে, নৌকা মার্কা ক্ষমতায় এলে মানুষের শান্তি থাকে, জীবনের নিরাপত্তা থাকে, শিক্ষা ভালো থাকে। তাই আপনাদের কাছে আমার একটাই চাওয়া, আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগের হাতকে শক্তিশালী করবেন। ২০৪১ সালে আমরা বাংলাদেশকে স্মার্ট সোনার বাংলা গড়ে তুলব। সেই কারণেই আপনাদের কাছে নৌকায় ভোট চাই। নৌকার প্রার্থী রাশেক এখানে প্রার্থী। তার বাবা ছিল এখানে, আজকে তাকে দিয়েছি। যুব সমাজ তারুণ্য সম্পদ। কাজেই আপনারা তাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button