।। নিজস্ব প্রতিবেদক।।
দীর্ঘ ৫ বছর পর বরিশালে আসছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সিলেট থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর ৮ দিনের মাথায় আগামী ২৯ ডিসেম্বরে বরিশালে প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে উজ্জীবিত পুরো দক্ষিণবঙ্গের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং সমর্থকরা। সঙ্গত কারণেই প্রধানমন্ত্রীর বরিশাল সফরকে খুবই গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে দলীয় প্রচারণায় নৌকার পক্ষে এখনো অংশ না নিয়ে বা অভিমান করে আছেন তারাও প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে একযোগে নৌকার বহরে শরিক হবেন বলে প্রার্থীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শতশত সদস্য বরিশাল মহানগরী ঘিরে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে। নগরজুড়ে চলছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের কঠোর নজরদারি।
নেতাকর্মীরা বলছেন, বরিশালে শেখ হাসিনার সফর শুধু বরিশাল জেলাতেই নয়, পুরো বিভাগের ৬টি জেলার ২১টি সংসদীয় আসনেই ভোটারদের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। আগামী ২৯ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার বরিশাল সফরের ফলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আরো উজ্জীবিত হয়ে উঠবে। আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকেই এবার নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নেমেছেন। তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীও রয়েছেন। নৌকা মার্কার সমর্থক বা কর্মী হওয়ার পরও নৌকার পালে হাওয়া দিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন না। অভিমান নিয়ে বসে থাকা এসব নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনার বরিশাল আগমনের পর নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করবেন।
প্রার্থীরা মনে করছেন, শেখ হাসিনার আগমন পুরো বরিশাল বিভাগের ২১টি সংসদীয় আসনেই আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করবে এবং নৌকার প্রার্থীরা বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন। তাই প্রধানমন্ত্রীর এ আগমনকে ঐতিহাসিক করতে বিপুল জনসমাগমের পরিকল্পনা নিয়েছেন প্রার্থীরা। বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার বরিশালে আগমন উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশে প্রায় ১০ লাখ লোকের সমাগম হবে। গত ২৩ ডিসেম্বর বরিশালে আওয়ামী লীগ বিভাগীয় সব নেতাদের সমন্বয়ে একটি বর্ধিত সভাও হয়েছে। ওই সমন্বয় সভায় বরিশাল বিভাগের সব আসনের নৌকার প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ সফল করতে বিভিন্ন দিক নিয়ে ওই সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভায় উপস্থিত নৌকার প্রার্থীরা আশা করেছেন প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে হয়তো দলের মধ্য থেকে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তাদের ব্যাপারে একটি সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে নৌকার প্রার্থী মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ মল্লিক বলেন, নেত্রীর আগমন আমাদের জন্য খুশির সংবাদ। নেত্রীর আগমনে নৌকার পক্ষে সবাই উদ্বুদ্ধ হবেন। নৌকার প্রধান মাঝি তিনি। নেত্রী নৌকার বাইরে কিছু বলবেন না। তিনি নৌকার কথাই বলবেন, স্বতন্ত্রের কথা বলবেন না। আর এতে নৌকার লোক ও ভোটাররা আরো উদ্বুদ্ধ হবেন। ফলে বাকি সবাই এমনিতেই পিছিয়ে যাবেন।
বরিশাল-৫ আসনে নৌকার প্রার্থী জাহিদ ফারুক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৫ বছরে বরিশালের ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি বরিশালে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি বন্ধে সদর আসনে নৌকাকে বিজয়ী করার আহ্বান জানান তিনি। পুনর্নির্বাচিত হতে পারলে সদর উপজেলাকে শহরে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ২৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বরিশালে আসছেন নির্বাচনী প্রচারণায়। এতে অবশ্যই নৌকার পক্ষে ঢেউ উঠবে। যারা এখনো নৌকার বাইরে আছেন তারা অবশ্যই নৌকায় উঠবেন।
বরিশাল-২ আসনে মহাজোটের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রাশেদ খান মেনন বলেন, যদিও বিভিন্ন জায়গায় নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্রের পক্ষে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী আসলে সেই অবস্থার অবসান ঘটবে বলে মনে করি। কারণ নৌকা মানেই আওয়ামী
লীগ, আওয়ামী লীগ মানেই নৌকা। এই নৌকা বঙ্গবন্ধুর নৌকা, এই নৌকা শেখ হাসিনার নৌকা। ইতোমধ্যেই ক্ষুব্ধ থাকা এবং নৌকার বিরোধিতা করা অনেকেই নৌকার জোয়ারে সামিল হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর এখনো যারা দূরে আছেন, তারাও নৌকার পক্ষে কাজ করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়ে রাশেদ খান মেননের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। অসুস্থ থেকেও তিনি বিভিন্ন নির্বাচনী সভায় যোগ দিয়ে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে বক্তব্য রাখছেন- যা প্রশংসার দাবি রাখে। রাগে-ক্ষোভে যারা বিরোধিতা করছেন, নৈতিকভাবে আগেই তারা পরাজিত। তার আসনে জেলার সভাপতি-সম্পাদকসহ উজিরপুর ও বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা তাকে ভালোভাবে গ্রহণ করেছেন এবং তারা নৌকার পক্ষে নির্বাচনী কাজ পরিচালনা করছেন।
এদিকে, প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবারও বরিশাল নগরীর বিভিন্ন স্থানে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন বরিশাল-৫ (সদর) আসনের নৌকার প্রার্থী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম এমপি। দুপুর ১টায় বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকা থেকে গণসংযোগ শুরু হয়ে চকবাজার, লাইনরোড, সদর রোডসহ বিভিন্ন সড়ক হয়ে নির্বাচনী কার্যালয় গিয়ে শেষ হয়। পরে সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে আয়োজিত জনসভায় অংশ নেন তিনি। এ সময় জাহিদ ফারুক এমপি সাংবাদিকদের বলেন, জাতির পিতা স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি সুখীসমৃদ্ধ দেশ। একটি সোনার বাংলাদেশ। কিন্তু তিনি তা বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ দেশ অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ। যখন শেখ হাসিনার সরকার ছিল না তখন আমরা অনেক কষ্টে জীবন যাপন করেছি। আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশে পৌঁছেছি। গণসংযোগ ও সমাবেশে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।