বাকেরগঞ্জে সংখ্যালঘুর বাড়িঘর, দোকান, মন্দিরে ভাঙচুর জ্বালাও পোড়াও চাঁদাবাজী, দখলবাজী লুটপাট অব্যাহত


admin প্রকাশের সময় : অগাস্ট ১০, ২০২৪, ২:০৬ অপরাহ্ন /
বাকেরগঞ্জে সংখ্যালঘুর বাড়িঘর, দোকান, মন্দিরে ভাঙচুর জ্বালাও পোড়াও চাঁদাবাজী, দখলবাজী লুটপাট অব্যাহত

।।স্টাফ রিপোর্টার, বাকেরগঞ্জ।।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বাকেরগঞ্জ উপজেলায় সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। বাকেরগঞ্জের ১৪টি ইউনিয়নজুড়ে একদিকে সম্প্রীতি সভা চলছে, অন্যদিকে অব্যাহত রয়েছে সংখ্যালঘুর বাড়িঘর, দোকান, মন্দিরে ভাঙচুর জ্বালাও পোড়াও চাঁদাবাজী, দখলবাজী লুটপাট।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই সর্বহাটের কাঠালিকলা খ্যাত ডাকাত সর্দার পাদ্রীশিবপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর ১নং ওয়ার্ডের ভোট ডাকাতি করা ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান মোতালেবের নেতৃত্বে বাকেরগঞ্জ উপজেলার পাদ্রীশিবপুর ইউনিয়নে চলছে সংখ্যালঘুর বাড়িঘর, দোকান, মন্দিরে ভাঙচুর জ্বালাও পোড়াও চাঁদাবাজী, দখলবাজী লুটপাট।

এই ডাকাত সর্দার মোতালেব মেম্বার পাদ্রীশিবপুর ভবানীপুর বাজার এলাকায় সরকারি নিষেধাজ্ঞােকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ৬ আগস্ট খাল দখল করে ভবন নির্মাণ কাজে নেতৃত্ব দেন। ৫০ হাজার টাকা চুক্তিতে এই অপকর্ম করা হয়।

এছাড়া ৭ আগস্ট এই ডাকাত সর্দার মোতালেব মেম্বারের নেতৃেত্বে পাদ্রীশিবপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের চৌহদ্দির জমি দখল করে ব্যক্তিগত রাস্তা নির্মাণ করেছেন। স্থানীয় ৬টি পরিবারের নিকট হতে ৫ লক্ষাধিক টাকা নিয়ে এ অপকর্ম করেন তিনি। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তহশিল অফিস বন্ধ থাকা এবং স্থানীয় থানা পুলিশের কার্যক্রম স্থগিত থাকার সুযোগে এই দখলবাণিজ্য সংঘটিত হয়।

দুর্বলপ্রকৃতির এবং ভিন্নমতের লোজনকে জিম্মি করে টাকা আদায়, খাল দখল করে ভবন নির্মাণ, তহশিল অফিসের জমি দখলসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এবং অপকর্মের চুক্তি নিয়ে তা বাস্তবায়ন করে ব্যাপক লুটপাট অব্যাহত রেখেছে এই সন্ত্রাসী বাহিনী।

সাবেক এমপি আবুল হোসেন খান করছেন সম্প্রীতি সভা, অপরদিকে তার অনুসারিরা চালাচ্ছে লুটপাট। অনুসারি ফন্দিবাজদের কারণে বিএনপিদলীয় সাবেক এমপি’র সম্প্রীতি সভাকে সাধারণ মানুষ আইওয়াশ মনে করতে শুরু করেছেন।

পুরো উপজেলাজুড়ে চরম সহিংস ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে ৬ নং ফরিদপুর ইউনিয়নের গাজীতলা বাজার সংলগ্ন বিপুল ও বিনয় দাসের বাড়ি ঘরে হামলা লুট ও মন্দিরে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনার পর থেকে সংখ্যালঘু পরিবারগুলো প্রতিবেশীর বাড়ি-ঘরে আশ্রয় নিয়েছে।
এছাড়াও বাকেরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড ফলপট্টি সহ অর্ধশত দোকানে অগ্নি সংযোগ করে লুটপাট চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বাসস্ট্যান্ড এলএফজি চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, আপ্যায়ন হোটেলে এ্যাণ্ড রেস্তোরাঁ, বাপ্পি মিষ্টান্ন ভান্ডার ভাঙচুর লুটপাট করা হয়েছে। উপজেলা শহরের সদর রোডে বেশ কিছু দোকানপাট ভাঙচুর করে দখলে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের চৌমাথা নিরঞ্জন ভ্যারাইটিজ স্টোরে ভাংচুর চালিয়ে লুটপাট করেছে।

ভরপাশা ইউনিয়নের ইউনিয়ন পরিষদ ভাঙচুর করে লুটপাট করেছে দুর্বৃত্তরা। দাড়িয়াল ইউনিয়ন পরিষদের ইউনিয়ন পরিষদ ভাঙচুর লুটপাট সহ সুশীল বাবু ও বিজয় মাঝির বাড়িঘর ভাঙচুর করে লুটপাট করে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এছাড়াও উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নে অর্ধশত বাড়িঘর দোকানপাট ভাঙচুর করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘুরা এখন আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। অধিকাংশ হিন্দু ব্যবসায়ীরা হামলার ভয়ে নিজেরা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে রেখেছেন।

এছাড়াও ৭ আগস্ট উপজেলা শহরের চৌমাথা সানমুন হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন আলোচনা সভায় ৭ নং ওয়ার্ডের বিএনপি ক্যাডার বেল্লাল হোসেনের নেতৃত্বে সভা চলাকালে ৩৫ থেকে ৪০ জনের একটি বাহিনী দেশিয় অস্ত্র নিয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। ওই হামলায় উপজেলায় কর্মরত ৫ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন।

বাকেরগঞ্জের সাবেক বিএনপির এমপি আবুল হোসেন খান হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট ঘটনায় মাইকিং করে এলাকায় সতর্ক বার্তা দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি বিএনপির নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন পারামহল্লায় ভাঙচুর লুটপাট প্রতিবাদ করার। ইতিমধ্যে সাবেক এমপি আবুল হোসেন খান সহ তার নেতাকর্মীরা ১৪ টি ইউনিয়নে ঘুরে ঘুরে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এবং তিনি সকল নেতা কর্মীদের সচেতন হয়ে দুর্বৃত্তদের প্রতিরোধ করা নির্দেশ দিয়েছেন। এসব ঘটনার সাথে বিএনপির কোনো নেতাকর্মী জড়িত নয় বলে তিনি জানিয়েছেন।

বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করায় তারা মূলত ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে দাঁড়াতে পারছেননা। কোন সহযোগিতা করতে পারছেন না। ক্ষতিগ্রস্থতরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত সেনাবাহিনীর সহযোগিতা কামনা করেছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দরা জানিয়েছেন, ছাত্রজনতার অনেক আত্মত্যাগের পর আমরা বিজয়ী হয়েছি। অথচ একটি মহল আমাদের আন্দোলনকে কলঙ্কিত করতে চেষ্টা করছে। তারা সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকাণ্ড ও ভাংচুর করেছে। ওইসকল দুবৃত্তরা সেই সৈরাচার হাসিনার ন্যায় অত্যাচার ও দখল উৎসবে মেতে উঠেছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রন, লুটপাট প্রতিরোধ, সংখ্যা লঘুদের প্রোটেকশন, পরিচ্ছন্নতা অভিযান নানামুখী কর্মকাণ্ড নিয়ে মাঠে নেমেছে।

এ বিষয়ে বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, এলাকায় আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে সর্বদলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে আলোচনা সভা করেছি। সবাইকে শান্ত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।