অন্যান্যবরিশালসারাদেশ

কুয়াকাটা পৌর এলাকায় এখনো নজরুল আতঙ্ক!

।।মোঃ বাদল হোসেন, পটুয়াখালী।।
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পৌর এলাকায় নজরুল আতঙ্ক এখনো কাটেনি। অপসারিত পৌরমেয়র আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের মেয়েজামাই জেলার দুমকী উপজেলা ভূমি অফিসের পেশকার এই নজরুল এখনো বীরদর্পে অপকর্ম করে চললেও ভয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। পুরনো নিয়মে বহাল তবিয়তে চলছে তার সকল অপকর্ম। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নজরুলের শ^শুর অপসারিত পৌরমেয়র আনোয়ার হোসেন হাওলাদার আত্মগোপনে চলে গেছেন। তার অনুপস্থিতিতে তাদের পারিবারিক সিন্ডিকেট পরিচালনা করছেন সরকারি চাকুরে মেয়েজামাই নজরুল ওরফে ‘জামাই নজরুল’।

কুয়াকাটা পৌরসভা কার্যালয় এবং সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অপসারিত পৌরমেয়র আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের ‘পারিবারিক সিন্ডিকেট’ এর প্রধান হচ্ছেন নজরুল ওরফে ‘জামাই নজরুল’। তিনি স্থানীয়দের কাছে ‘জামাই নজরুল’ হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত এই ‘পারিবারিক সিন্ডিকেট’ এর নানা অপকর্মের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- ‘উন্নয়ন কর্মকান্ডের লুটপাট। চতুরকৌশলে ঠিকাদারদের জিম্মি করে এবং উল্লেখিত সিন্ডিকেটের সদস্যদের নামে ঠিকাদারী লাইসেন্সের বিপরীতে রাস্তা, কালভাট, ব্রিজ, সাইক্লোন শেল্টার, স্কুল, মাদরাসা সহ অন্যান্য উন্নয়ন কাজ বাগিয়ে নিয়ে কোটি কোটি টাকা বাগিয়ে নিয়েছে ‘পারিবারিক সিন্ডিকেট’। এই সিন্ডিকেটের প্রধান ‘জামাই নজরুল’ ছাড়া অন্যতমদের মধ্যে রয়েছেন- ‘অপসারিত পৌরমেয়র আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের ভায়রা ইসহাক, শ্যালক আলামিন এবং বেল্লাল ওরফে ম্যানেজার বেল্লাল। তাদের প্রত্যেকের নামে ঠিকাদারী লাইসেন্স রয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সূত্রানুযায়ি, একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে ‘পারিবারিক সিন্ডিকেট’ এর প্রধান ‘জামাই নজরুল’ কে বখড়া না দিয়ে কোনো ঠিকাদার কুয়াকাটা পৌর এলাকায় কাজ করতে পারেননি। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পরেও অপসারিত পৌরমেয়র আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের ছত্রছায়ায় থাকা ‘পারিবারিক সিন্ডিকেট’ এর সেই দাপটীয় রাজত্বের অবসান হয়নি।

সূত্রমতে, চলতি বছরের মার্চ মাসে এডিপি’র অর্থায়নে সিটিসিআরপি প্রকল্পের আওতায় ১টি প্যাকেজে কুয়াকাটা পৌর এলাকায় ১ হাজার ৭’শ ২০ মিটার রাস্তা এবং ৪টি কালভাট নির্মাণের কাজ পায় বরিশালের ঠিকাদার এইচএম দেলোয়ার। ওই প্যাকেজের প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। পৌর এলাকার ১নং ওয়ার্ডের কচ্ছপখালী রাস্তা এবং ওই রাস্তায় ৩টি কালভাট ও ৬নং ওয়ার্ডের বঙ্গবন্ধু রাস্তা সহ ১টি কালভাট নির্মাণের কথা রয়েছে ওই প্যাকেজের মাধ্যমে।

সূত্রের দাবি অনুযায়ি, ঠিকাদার এইচএম দেলোয়ারের নামে দেখানো হলেও ‘গুছ’ প্রক্রিয়ায় বাগিয়ে নিয়ে সিটিসিআরপি প্রকল্পের ওই কাজ করছেন আলোচিত ‘পারিবারিক সিন্ডিকেট’ এর প্রধান ‘জামাই নজরুল’।

এবিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের সময় সরেজমিনে পৌর এলাকার ১নং ওয়ার্ডের কচ্ছপখালী গেলে সেখানে কথা হয় স্থানীয় লোকজনের সাথে। তাদের মধ্যে মোঃ রাসেল মৃধা, মোহাম্মদ ইসলাম, নাসির গাজী সহ অনেকেই বলেন, তারা নিজেরাই-তো (অপসারিত পৌরমেয়র আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের ছত্রছায়ায় থাকা ‘পারিবারিক সিন্ডিকেট’) সব করেন। একই কথা বলেন, পৌর এলাকার ৬নং ওয়ার্ডের নবীণপুরের সখীনা বেগম, সাব্বির হোসেন, সুলতান আহম্মেদ সহ অনেকে।

এবিষয়ে নজরুল ওরফে ‘‘‘জামাই নজরুল’’ ‘গুছ’ প্রক্রিয়ায় টেন্ডার বাগিয়ে নেয়া সহ অন্যান্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন- ‘আমি ঠিকাদার নই। ঠিকাদারদের কাজে সহযোগিতা করে কিছু টাকা পাই। সেই ধারাবাহিকতায় ঠিকাদার এইচএম দেলোয়ারের ১ হাজার ৭’শ ২০ মিটার রাস্তা এবং ৪টি কালভাট নির্মাণের কাজ করিয়ে দিলে হয়তো ৪/৫ লাখ টাকা পেতে পারি। সরকারি চাকুরিরত অবস্থায় এধরণের কাজ করা অপরাধ নয় বলে তিনি দাবি করেন।

তথাকথিত ঠিকাদার এইচএম দেলোয়ারের কাছে জানতে চাইলে তিনি ইনিয়েবিনিয়ে প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলেন- ‘ব্যাস্ততার কারণে তিনি নিয়মিত কাজের তদারকী করতে পারছেন না। একারণে কাজ দেখাশুনার জন্য সোহাগ নামে তার ম্যানেজার রয়েছেন।

পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ূন কবির অভিযোগ স্বীকার করে বলেন- ‘কোনো প্রকার আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে ১ কোটি টাকা বিল উত্তোলন করে নেয়া হয়েছে’। তিনি দাবি করেন- ‘আমরা অসহায়’। এছাড়াও তিনি বলেন কিছু বলতে গেলেও ধমক দেয়া হয়। কোনো কাজের কাছে গেলে ‘‘এখানে আপনার কি বলে হুমকী-ধামকী দিয়ে সরে যেতে বলে’’ ‘পারিবারিক সিন্ডিকেট’ বাহিনী।

নবনিযুক্ত পৌর প্রশাসক মোহাম্মদ কাউছার হামিদ বলেন- ‘অল্প কিছুদিন আগে এখানে যোগদান করেছি। আগে কি হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। এখন কেউ অনিয়ম করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

 

 

 

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button