।।বাদল হোসেন, পটুয়াখালী।।
কুয়াকাটায় পটুয়াখালী জেলা পরিষদের ডাকবাংলোর ১০তলা ভবন নির্মাণ কাজে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত এই ভবন নির্মাণ কাজের উদ্যোগ নেয়া হয় ২০২০ সালে। জেলা পরিষদের নিজস্ব তহবিল থেকে ১০ কোটি টাকার বরাদ্দ নিয়ে প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করা হয়। কিন্তু‘ প্রাথমিক কার্যক্রম শুরুর পরপরই আবার বন্ধ হয়ে যায়। জানা গেছে- ‘কার্যক্রম শুরুর পর ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও জমি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে থমকে আছে গুরুত্বপূর্ণ এই নির্মাণ কাজ।’
সূত্রমতে- ‘ কুয়াকাটায় পটুয়াখালী জেলা পরিষদের ডাকবাংলোর ১০ তলা ভবন নির্মাণের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরুর পরপরই স্থানীয় একটি অসাধুচক্র ব্যক্তিগত ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধরণের ফন্দিফিকির শুরু করেন। এর ধারাবাহিকতায় উল্লেখিত ফন্দিবাজচক্রের হোতা ইব্রাহিম শেখ, সোহরাব শেখ এবং জিয়াউর রহমান শেখ গং জমির মালিকানা দাবী করে একটি মামলা দায়ের করেন। পটুয়াখালী যুগ্ম জেলা জজ আদালতে দায়েরকৃত মামলা নং ১৩৭/২০২১। মামলা দায়েরের পর স্থবির হয়ে পড়ে পটুয়াখালী জেলা পরিষদের ডাকবাংলোর ১০ তলা ভবন নির্মাণের কাজ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের কোলঘেঁষা জেলা পরিষদের ৫২ শতাংশ জমি রয়েছে। পাকা নিরাপত্তা প্রাচীরে ঘেরা ওই জমির চৌহদ্দির মধ্যে জেলা পরিষদের দুই তলা বিশিষ্ট ‘ঝিনুক’ নামের একটি ডাকবাংলো রয়েছে। পটুয়াখালী জেলা পরিষদের প্রথম নির্মিত ডাকবাংলোর ওই ভবনটি এখন পরিত্যক্ত। একারণে ভবনটি নিলামে বিক্রি করা হয়েছে।’
সূত্রের দাবী অনুযায়ি- ‘জেএল ৩৪ কুয়াকাটা মৌজার এসএ ১০৫০ নং খতিয়ানের রেকর্ডীয় মালিক ছোমেদ শেখ গং এসএ ৫১৮৪ নং দাগের ৫২ শতাংশ জমি পটুয়াখালী জেলা পরিষদ বরাবর দান করেন। জেলা পরিষদের ডাকবাংলো নির্মাণের জন্য জমি দান করার কারণে ছোমেদ শেখের ভাই সেকান্দার শেখ কে দারোয়ান কাম কেয়ারটেকার পদে চাকরি দেওয়া হয়। পূর্ব পুরুষের জমি দানের সুবাদে সেকান্দার শেখ অবসরে যাওয়ার পর তার ভাতিজা সোহরাব শেখ কে ওই পদে চাকরি দেওয়া হয়।’ সূত্রের দাবী- ‘উল্লেখিত সোহরাব হোসেন শেখ এর চাকরির মেয়াদ শেষে অবসরের সময় হওয়ার পরপরই লোভে পড়ে অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করতে চাইছেন। একারণে তিনি ইব্রাহিম শেখ এবং জিয়াউর রহমান শেখ গংদের সাথে জোটবেঁধে জেলা পরিষদের উন্নয়ন কাজ বাঁধাগ্রস্ত করার জন্য ন্যাক্কারজনক অপকর্মে লিপ্ত হয়েছেন।’
পটুয়াখালী জেলা পরিষদের উচ্চমান সহকারী শামীম আহমেদ দাবী করেন- ‘সাগরকণ্যা খ্যাত কুয়াকাটায় পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়ার পাশাপাশি এখানকার জমির মূল্য বেড়েছে সোনার চেয়েও বেশি। যার কারণে জমির লোভে পড়ে অযথা মামলা-মোকদ্দমার সৃষ্টি করেছে একটি স্থানীয় কুচক্রীমহল। তিনি জানান- ‘স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় জেলা পরিষদের ঝিনুক নামের ডাকবাংলোর জরাজীর্ণ ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণার নির্দেশ দেন। এর প্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর জেলা কনডেমনেশন কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ওই ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণাপূর্বক নিলামে বিক্রি করেন।’ তার দাবী অনুযায়ি- ‘ব্যবহার অনুপযোগী ভবনটি নিলামে বিক্রির পর ওই জমির প্রতি উল্লেখিত অসাধুচক্রের লোভ কয়েকগুন বেড়ে যায়। একারণে ওই চক্রটি মামলা জটিলতার সৃষ্টি করায় জেলা পরিষদের ডাকবাংলোর ১০ তলা ভবন নির্মাণ কাজে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়।’ তবে তিনি আশা করেন- ‘করে লোভাতুর চক্রান্তকারীদের ষড়যন্ত্র আইনিভাবে মোকাবেলা করে নতুন ভবন নির্মাণ কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন করা হবে।
এবিষয়ে মামলার ২নং বাদী সোহরাব শেখ জেলা পরিষদের অনুকুলে জমি দান করার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন- ‘আমি জমি দাবী করে জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে মামলা করিনি। আমার ভাইয়েরা আমাকে মামলার ২নং বাদী বানিয়েছে। তা জানতে পেরে মামলার বাদী থেকে নিজের নাম প্রত্যাহারের জন্য আমি আদালতের বরাবরে আবেদন করেছি। এছাড়া জেলা পরিষদের জমি কিংবা অন্য সম্পত্তির ওপর তার কোনো দাবী-দাওয়া নেই বলেও জানান তিনি।’
জেলা পরিষদের উন্নয়ন কাজে বাঁধা সৃষ্টিকারী মামলার অন্যতম বাদী জিয়াউর রহমান শেখের সাথে সরাসরি এবং মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও এবিষয়ে কোনো কথা না বলে এ প্রতিবেদককে এড়িয়ে যান তিনি।
পটুয়াখালী জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান সোহেল বলেন- ‘সাগরকণ্যা খ্যাত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত পর্যটক শিল্পের জন্য অপার সম্ভাবনাময়। এ সম্ভবনাকে কাজে লাগাতে হবে। কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতকারীর কারণে স্থবির হয়ে পড়া ডাকবাংলোর ১০ তলা ভবন নির্মাণ কাজ সফলভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আইনি প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকতা।
আপনার মতামত লিখুন :