বস্তিতে হামলা চালিয়ে লুট করলো বিএনপি নেতারা


admin প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ২১, ২০২৪, ১:৩২ অপরাহ্ন /
বস্তিতে হামলা চালিয়ে লুট করলো বিএনপি নেতারা

।।অনলাইন ডেস্ক।।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মিছিল নিয়ে এসে বস্তি উচ্ছেদের নামে দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও আসবাবপত্র লুট করার অভিযোগ ওঠেছে মোহাম্মদপুর থানা ও ওয়ার্ডের বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

শনিবার সকাল ১০টায় মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ সাত মসজিদ হাউজিংয়ের পাশে বস্তিতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বস্তিবাসীরা মোহাম্মদপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা যায়, সকাল ১০টার দিকে মোহাম্মদপুর থানা বিএনপির আহবায়ক শুক্কুর মাহমুদ, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মান্নান শাহীনের নেতৃত্বে ৫০-৬০ জনের একটি দল দেশীয় ধারালো অস্ত্র-শস্ত্রসহ বিএনপির মিছিল নিয়ে বস্তিবাসীর ওপর আকস্মিক হামলা চালায়।

এ সময় বাসায় থাকা নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও ঘরের আসবাবপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায়। এছাড়াও বস্তিতে প্রবেশ করে বিএনপির মিছিলে থাকা নেতাকর্মীরা কয়েকজন নারীকে পিটিয়ে আহত করে। এদের মধ্যে একজনের কোলে থাকা শিশুকে মাটিতে ছুড়ে ফেলে দিয়ে তার ওপর আক্রমণ করা হয়।

সরেজমিন মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধের পাশে ভাঙ্গা মসজিদ এলাকায় বস্তিতে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙ্গা মসজিদের পাশে সড়কের শেষপ্রান্তে খালের ওপর বসবাস করা বস্তির ঘরগুলো ভাঙচুর করে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বস্তিতে থাকা বাসিন্দারা কেউ রিকশা চালিয়ে, কেউ ভিক্ষাবৃত্তি করে, কেউ বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে।

আকস্মিকভাবে হামলা চালিয়ে তাদের বাসাগুলো ভাঙচুর করে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ায় তীব্র এই শীতের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক অসুস্থদের নিয়ে মাথাগোঁজার ঠাঁই হারিয়ে নিরুপায় হয়ে পড়েছেন এসব নিম্নআয়ের মানুষেরা।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আমাদের কোথায়ও থাকার জায়গা নাই দেখে আমরা কোনোরকম টিন দিয়ে বাসা বানিয়ে এখানে দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ বসবাস করতেছি। আমাদের যদি এখান থেকে উঠিয়ে দিতে হয় তাহলে সরকার আমাদের উঠিয়ে দিবে। তাতে আমাদের কোনো আক্ষেপ থাকবে না; কিন্তু একটি রাজনৈতিক দলের মিছিল নিয়ে এসে অস্ত্র-শস্ত্র দিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে সব ভাঙচুরের পর লুটপাট করে নিয়ে কেন আমাদের ক্ষতি করা হলো। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

এ ঘটনায় মারধরের শিকার বস্তির বাসিন্দা আহত ভুক্তভোগী খায়রুন বেগম জানান, বিএনপির নেতারা মিছিল নিয়ে এসে আমাদের বাড়িঘর ভাঙচুর শুরু করে। আমি তাদের বাধা দিতে গেলে আমার কোলে থাকা অসুস্থ শিশুকে কোল থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে আমার ওপর মিছিলের সাথে আসা পুরুষরা হামলা করে প্রচুর মারধর করে। আমার পুরো শরীরে মারধরের চিহ্নগুলো ব্যথায় ফুলে গেছে। এ সময় তারা আমাদেরসহ অন্য ঘরগুলোতে ঢুকে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও আসবাবপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায়। এ সময় আমেনা বেগম, রুজিনা বেগমসহ বস্তির বেশ কয়েকজন মহিলা মারধরের শিকার হন।

এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানা বিএনপির আহবায়ক শুক্কুর মাহমুদ জানান, কারা বস্তি দখল করে ভাড়া উঠাচ্ছে আমরা সেটাই দেখতে গিয়েছিলাম। আমরা কোনো মিছিল নিয়ে যাইনি। আমাদের সাথে নগরের কয়েকজন নেতা ছিলেন। ওই সময় আমাদের কেউ তাদের ওপর হামলা কিংবা কোনো লুটপাট করেননি।

মোহাম্মদপুর ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মান্নান শাহীন জানান, আমি শুনেছি বিএনপি নগর, থানা ও ওয়ার্ডের কয়েকজন নেতা বস্তির ওখানে গিয়েছিলেন। আমি অসুস্থ থাকায় সেখানে যাইনি। সেখানে কী ঘটেছে আমি সেটাও জানি না। তবে লোকজন সেখানে যাবে বিষয়টা আমি জানতাম।

এ ঘটনায় অভিযোগ তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুল জানান, এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে এসে একটা লিখিত অভিযোগ দিয়ে গেছেন। আমরা ঘটনাস্থলে এখনো যেতে পারিনি। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিদর্শন করে আইনগত ব্যবস্থা নেব।