অবৈধ ঠিকাদার দিয়েই চলছে পটুয়াখালীর ৮ এলএসডি’র কার্যক্রম


admin প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ২২, ২০২৪, ৯:৩৬ পূর্বাহ্ন /
অবৈধ ঠিকাদার দিয়েই চলছে পটুয়াখালীর ৮ এলএসডি’র কার্যক্রম

।।নিজস্ব প্রতিবেদক, পটুয়াখালী।।
পটুয়াখালী জেলার ৮টি এলসডি তে শ্রমিক ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়ম দুর্নীতির ঘটনা ঘটে। দরপত্র আহ্বান, যাচাই-বাছাই থেকে শুরু করে চুক্তিপত্রে-ও ছলচাতুরির মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। খাদ্য বিভাগের তালিকাভুক্ত ঠিকাদারদের বাদ দিয়ে খুলনা খালিশপুরের ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিতর্কীত পন্থায় নিয়োগ দেওয়া সেই ঠিকাদার দিয়েই চলছে জেলার ৮ এলএসডি’র কার্যক্রম।

এ বিষয়ে তালিকাভুক্ত ঠিকাদাররা আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তা এমনকী খাদ্য মন্ত্রণালয় সহ বিভিন্ন দপ্তরের একাধিকবার লিখিত অভিযোগ করেও কোনো প্রকার সুরাহা মেলেনি।

সূত্রমতে- ‘গত ১৪ জানুয়ারি খাদ্য বিভাগের তালিকাভুক্ত ১২জন শ্রম ও হস্তার্পণ ঠিকাদার খাদ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালন ও প্রশাসন বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, জেলা প্রশাসক সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন। লিখিত অভিযোগে ২০২২-২০২৩ ও ২০২৩-২০২৪ অর্থবছওে শ্রম ও হস্তার্পণ ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের আবেদন করা হয়।’

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়- ‘২০২২ সালের ৬ জুন পটুয়াখালী জেলার ১২টি খাদ্য গুদামে (এলএসডি) শ্রম ও হস্তার্পণ ঠিকাদার নিয়োগের দরপত্রের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে ৮টি খাদ্য গুদামে শ্রম ও হস্তার্পণ ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু ওই ঠিকাদার নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়- ‘১০ এবং ২৯ নং ক্রমিকে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট ২০০৮ অনুযায়ি পরিচালিত হবে বিধায় পিপিআর ২০০৮ বিধিমালার ১০২ নং পৃষ্ঠায় দুই খাম বিশিষ্ট দরপত্রে ৬৮ঘ এর আর্থিক প্রস্তাব ও উন্মুক্ত মূল্যায়নের ক্রমিক নং ৩ এর ৯৮ এবং ৯৮(২৪) বিধি অনুযায়ি সর্বনি¤œ দরে কাজ পাওয়ার উদ্দেশ্যে দরপত্র দাখিলকারী ঠিকাদারদের ১৬২টি দরপত্রের ৩৫৭২টি শর্তাবলির কাগজপত্রের যাবতীয় যাচাই-বাছাই মাত্র ৩ ঘন্টার মধ্যে শেষ করা হয়। যাতে সঠিকভাবে যোগ্যতা প্রস্তাব যাচাই করা হয়নি। লোটাস এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স রুম্পা এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স আসাদ ট্রেডিং, মেসার্স গাজী এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স জান্নাত ট্রেডার্স, মেসার্স লিজা এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স পোদ্দার এন্টারপ্রাইজ এবং মেসার্স পিয়াল এন্টারপ্রাইজ নামীয় প্রতিষ্ঠান সমূহ জেলার বাইরের ঠিকাদার কিংবা প্রতিষ্ঠানের দরদাতাগণের যোগ্যতা প্রস্তাবে শর্তাবলি ভ্যাট হালনাগাদ, ভ্যাট পরিশোধের প্রত্যয়নপত্রের কথা উল্লেখ থাকলেও উল্লেখিত দরদাতারা হালনাগাদ না দিয়ে পূর্বের অর্থাৎ ২০১৯ সালের প্রত্যয়নপত্র দাখিল করেন। এক্ষেত্রে তাদের দরপত্র ইনফরমাল করা হয়নি। দরদাতাদের তফশিলে সাক্ষর সহ সীল প্রদান হয়নি।’

এমনকি আইটেম ভিত্তিক দর পূরণ করার পর সব আইটেমের দর যোগ করা হয়নি। এই যোগের ওপর সর্বনিম্ন দর নিরুপণ করে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। মোট যোগ না করার কারণে দরপত্র বাতিল করা হয়নি। যোগ্যতা প্রস্তাব যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে পিপিআর ২০০৮ বিধিমালা ৬৮ ও বিধির (২) উপবিধি লংঘন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কারিগরি প্রস্তাব মূল্যায়ন সমাপ্ত হওয়ার পর ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির অনুমোদন নেওয়া হয়নি। কমিটির উপস্থিতিতে আর্থিক প্রস্তাব খোলা হয়নি। বিধি ৯৭ অনুযায়ী কমিটির উপস্থিতিতে আর্থিক প্রস্তাব খোলা হয়নি।

এছাড়া কথিত দরদাতারা রিজার্ভ মূল্য (গোপানীয় দর) খাদ্য বিভাগের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে ফাঁস বা চুরি করে দরপত্র দাখিল করেন। তাদের দাখিলকৃত দরপত্রের দেওয়া দর রিজার্ভ মূল্যের সাথে হুবহু মিল রয়েছে।

অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়- ‘আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক গত ২০২২ সালের ৮ জুন ১৫৩ নং স্মারকে সংশ্লিষ্ট কমিটির মাধ্যমে পুনরায় যাচাই করার জন্য নির্দেশ দেন। এর প্রেক্ষিতে গত ২০২২ সালের ২০ জুন পুনরায় যাচাই করার তারিখ দেওয়া হয়। কিন্তু উদ্দেশ্যমূলকভাবে নির্ধারিত ২৮ জুন সভা না করে ২০ জুন করা হয়। এতে সংশ্লিষ্ট অনেকেই ওই সভায় উপস্থিত থাকতে পারেননি। যাতে নিজেদের মতো করে অর্থাৎ অসৎ উদ্দেশ্যে কমিটির পুনরায় যাচাই প্রক্রিয়া সৎম্পন্ন করা হয়।’

এছাড়া দরপত্রের বিজ্ঞপ্তির ক্রমিক নং- ২৯ এ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট ২০০৮ বিধিমালা অনুযায়ী পরিচালিত হবে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু দরপত্র দাখিলের নিয়মাবলি ও শর্তাবলির ক্রমিক নং ৩ এর (৩.৩) এর আইটেম ওয়ারি রিজার্ভ মূল্যের অস্বাভাবিক উচ্চ দর অথবা অস্বাভাবিক নিম্ন দর গ্রহন করা হবে না এই শর্তটি পিপিআর ২০০৮ বিধিমালার বর্হিভূত। দুই খাম বিশিষ্ট দরপত্রে পিপিআর ২০০৮ এর বিধিমালার ১০২নং পৃষ্ঠায় ৬৮ঘ এর আর্থিক প্রস্তাব ও উন্মুক্ত মূল্যায়নের ৩ উপবিধির ৯৮ বিধি অনুযায়ী সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ আছে- ‘সর্বনিম্ন মূল্যায়িত দরে দরদাতা নির্বাচন করবে।’

এতোসব অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও সংশ্øিষ্টদের রহস্যজনক নীরবতায় বিতর্কীত প্রক্রিয়ায় খুলনা খালিশপুরের লোটাস এন্টারপ্রাইজ নামক প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়। সেই বিতর্কীত ঠিকাদার দিয়েই এখনো চলছে জেলার ৮ এলএসডি’র কার্যক্রম।

এবিষয়ে লোটাস এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী সেলিম মিয়া বলেন- ‘আমি সারা বাংলাদেশের ঠিকাদার সমিতির সভাপতি। যারা যোগ্য, তারাই ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। আপনারা যা খুশি লেখেন।’

এবিষয়ে পটুয়াখালী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাসির উদ্দিন বলেন- ‘আমি নতুন যোগদান করেছি। তাই এ বিষয়ে আমি অবগত নই।’

এ বিষয়ে জানতে আঞ্চলিক কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ এর সাথে বারবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এছাড়া হোয়াটসঅ্যাপ সহ বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।